শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা: গত বছর ১৮ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে কুরিয়ারকর্মী নাহিদ হাসান ও দোকানকর্মী মোরসালিন নিহত হন। পরে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ পাঁচটি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন গ্রেফতার হন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু এ ঘটনায় বছর পার হতে চললেও পাঁচ মামলার তদন্তে কোনও অগ্রগতি নেই।
কবে নাগাদ এ মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হবে, সেটা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে তদন্ত সংস্থা ও থানা পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষ হলেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
তিন মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এ মামলাগুলো তদন্তাধীন। তদন্ত করতে তো সময় লাগছে। দ্রুত তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
দুই হত্যা মামলার বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রমনা বিভাগের উপকমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ দুই মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে ডিবি পুলিশের রমনা বিভাগ হত্যার দুই মামলা এবং নিউমার্কেট থানা পুলিশ অপর তিনটি মামলার তদন্ত করছে। এর মধ্যে একটি পুলিশের ওপর হামলা, একটি বিস্ফোরক আইনের এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের মামলা রয়েছে। তার মধ্যে নিউমার্কেট থানা পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক এই দুটি মামলায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর একটি মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও বাকিরা সবাই অজ্ঞাত।
এ ছাড়া কুরিয়ারকর্মী নাহিদ হাসান নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেছে তার পরিবার। ওই মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। দোকানকর্মী মোরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলায়ও অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের মামলাটি করেছেন যে প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স সে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। এই নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি ব্যক্তিকে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ এপ্রিল রাতে নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্ট ফুড এবং ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকানের দুই কর্মীর মধ্যে ইফতারের দোকান বসানো নিয়ে সংঘর্ষ তৈরি হয়। পরে ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মী ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসে। এতে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয় দিন ১৯ এপ্রিল দিনভর চলা এ সংঘর্ষে শতাধিক আহতের পাশাপাশি নিহত হন দুজন। পরদিন ২০ এপ্রিল সংঘর্ষ না হলেও পুরোটা সময় থমথমে ছিল নিউমার্কেট এলাকা। সেদিন মধ্যরাতে নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা কলেজের ছাত্র ও শিক্ষক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া শর্তসাপেক্ষে ২১ এপ্রিল থেকে নিউমার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই বৈঠকে ভবিষ্যতে যেকোনও ধরনের সংঘর্ষ বা সমস্যা এড়াতে ত্রিমাত্রিক কমিটি তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙচুরের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৮ মে দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় আসামি হারুন রশিদ, হেলাল উদ্দিন হাওলাদার, আশরাফ, রায়হান কাবিলা, আব্বাস আলী তালুকদার, সাজেদুল করিম মাজেদ ও মহিদুর রহমান সাগর জামিনে রয়েছে। মোরসালিন হত্যা মামলার কোনও আসামি নেই। আগামী ৭ মে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তবে নাহিদ হত্যা মামলায় ছয়জন আসামি গ্রেফতার হয়।
তারা হলো মাহমুদ ইরফান, আব্দুল কাইয়ুম, ফয়সাল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান সিয়াম, জুনাইদ বৃগদাদি ও পলাশ মিয়া। বিস্ফোরক আইনের মামলার কোনও আসামি গ্রেফতার হয়নি।
এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মকবুল হোসেন। মকবুল ছাড়া মামলায় আর যাদের নাম রয়েছে তারা হলো আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।
নাহিদ হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক আইনের এ তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩ মে দিন ধার্য রয়েছে।